মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৩ অপরাহ্ন
আমায় ক্ষমা কর প্রভু।ছবি-সংগৃহীত
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : আলহামদুলিল্লাহ, পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের রোজাগুলো রাখার সৌভাগ্য পাচ্ছি। রমজানের দিনগুলোতে আমরা চেষ্টা করছি সকল প্রকার ছোট বড় পাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে। জানি না, কতটুকু এতে সফল হতে পারছি।
অনেক সময় ছোট-খাট পাপ কাজকে আমরা গুরুত্ব দেই না। অথচ পাপ ছোট হোক বা বড় সব ধরণের পাপই ইসলামে নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং তোমরা তোমাদের পাপসমূহকে এই কারণে গোপন করতে না যে, পরকালে তোমাদের কর্ণ, তোমাদের চক্ষু এবং তোমাদের চর্ম তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে, বরং তোমরা ধারণা করিতে যে, আল্লাহ তোমাদের অনেক কার্যকলাপ সম্বন্ধে অবগত নন যা তোমরা করছ’ (সুরা হামীম আস সাজদা, আয়াতঃ ২২)।
আমরা যদি সব ধরণের পাপ কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করে রমজানের রোজাগুলো পালন করি তাহলে আল্লাহতায়ালা আমাদের পূর্বের সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন এবং আমাদের প্রতি রহম করবেন। এছাড়া আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর রহম করেন যে নিজের কথাকে সুন্দর করে, রোজাকে সংরক্ষণ করে, অন্যকে নিষ্ঠার সঙ্গে আহার করায় এবং উত্তমরূপে সালাত আদায় করে।
মহানবী (সা.) বলেন, ‘জান্নাতের মধ্যে কিছু কক্ষ রয়েছে, যার বাইরের অংশ ভেতর থেকে এবং ভেতরের অংশ বাইরে থেকে দেখা যায়। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, কক্ষগুলো কাদের জন্য হবে হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি নরম কথা বলে, অন্ন দান করে ও লোকেরা যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন সালাতে রত হয়-তার জন্য।” (আহমাদ, তিরমিজি)।
অপর এক হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন, বায়তুল্লাহর নিকট দু’জন কুরায়শী এবং একজন সাকাফী অথবা দু’জন সাকাফী ও একজন কুরায়শী বসেছিলেন। তাদের পেটের চর্বি ছিল খুব বেশি। কিন্তু অন্তরে বুদ্ধি ছিল খুব কম। তাদের একজন বললো, তুমি কি মনে কর আমরা যা বলছি আল্লাহ তা শুনছেন? অপরজন বললো, আমরা জোরে বললে তিনি শুনতে পান, আর চুপে চুপে বললে শুনতে পান না। অপরজন বললো, জোরে জোরে বললে যদি শুনতে পান তবে চুপে চুপে বললেও শুনতে পাবেন। তখন আল্লাহতায়ালা নাযেল করলেন, তোমরা দুনিয়ার অপরাধ করার সময় যখন লুকোতে, তখন তোমাদের এ চিন্তা ছিল না যে, তোমাদের চোখ, কান, চামড়া তোমাদেরই বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে, বরং তোমরা ধারণা করছিলে যে, তোমরা যা জান এর অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না’ (বোখারি)।
মূলত যারা পাপ কাজ করবে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই বিচার দিবসে সাক্ষ্য দিবে যে তারা কি করেছে। আর মহান আল্লাহতায়ালা সবই দেখেন ও জানেন। সে দিন পাপীদের অপকর্মের ছবি তাদের চোখে মুখেই ফুটে উঠবে। তারা ঐ সব পাপ কর্ম করেছে কি করেনি, এরূপ প্রশ্নের কোনোই প্রয়োজন হবে না।
মানুষ আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হয়েও আজ আমরা কত পাপ কাজই না করি। গায়ে শক্তি আছে বলে শক্তিহীনের ওপর চড়াও হচ্ছি। অর্থ আছে বলে অর্থহীনকে তুচ্ছ জ্ঞান করছি। এক কথায় যত পাপ আছে সবই আমার দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে।
কবি শেখ সাদী (রহ.) কত সুন্দরই না বলেছেন, ‘আমি ঐ পিপীলিকা, যাকে প্রতিদিন মানুষেরা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় পদদলিত করে চলে যায়। আমি বল্লা নই যে, মানুষকে দংশন করে কান্না-কাটি করার এবং কষ্ট দেব। আমি এ নেয়ামতের শোকর কীভাবে আদায় করব যে, মানুষকে কষ্ট দেয়ার শক্তি আমার নেই।’
আমরা কী কখনও ভেবে দেখেছি যে, সৃষ্টির মাঝে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী আমরা কিন্তু আমাদের কাজকর্মে কী আদৌ আমরা এর প্রমাণ দিতে পেরেছি? এর জন্য তো আমাদেরকে দিনরাত আল্লাহপাকের দরবারে শুকরিয়া আদায় করা উচিত। অথচ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হয়েও আজ আমার দ্বারা কতই পাপই না সংঘটিত হচ্ছে। আমাদেরকে এমনভাবে জীবন পরিচালনা করতে হবে আমাদের দ্বারা যেন কোনো ধরণের পাপ কাজ সংঘটিত না হয়।
যেহেতু পবিত্র রমজান মাস অতিবাহিত করছি। তাই আসুন নিজের সমস্ত পাপের জন্য ক্ষমা চেয়ে রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের আধ্যাত্মিক পানীয় পানে সিক্ত হই। প্রার্থনা করি আল্লাহর দরবারে, হে প্রভু! তুমি আমায় ক্ষমা করে তোমার নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নাও এবং করোনার আক্রমণ থেকে বিশ্বকে রক্ষা কর।,আমিন,
এসএস